১৯৮৬। মেক্সিকো বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার কোচ কার্লোস বিলার্দো সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে জানালেন আমার দলে একজন মারাদোনা আছেন। বাকিরা ফুটবলার। বিস্ফোরণ ঘটলো আর্জেন্টিনা থেকে বিশ্ব মিডিয়ায়। কিন্তু নিজের কথায় অটল এই ট্যাকটিশিয়ান।
বিলার্দো যে ভুল বলেননি তার প্রমান ঐ বিশ্বকাপেই মিলেছিল। মাত্র ২৬ বছর বয়সী তরুণের বা পায়ের জাদুতে মজেছিলো বিশ্ব। প্রথমবার বিশ্বকাপ গেলো আর্জেন্টিনার ঘরে।
একজনের হাতে ভর করে একটা দেশ বিশ্ব দরবারে কতটা বিখ্যাত হতে পারে তার সেরা উদাহরণ দিয়াগো আরমান্দো মারাদোনা।
আগে-পরে আরও তিন বিশ্বকাপ খেলেছেন। ৯০-এ হয়তো আরো বেশি একক নৈপুন্য দেখিয়েছেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি। তাই ৮৬ আজও অমলিন। থাকবে হয়তো আরো হাজার বছর।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে করা হ্যান্ড অব গড আজও রহস্য হয়ে টিকে আছে। ঐ ম্যাচেই মুগ্ধতা ছড়ানো একক নৈপুন্যের গোলটি পেয়েছে শতাব্দি সেরার স্বীকৃতি।
অথচ ফুটবলার হবেন সেটা ভাবনাতেই ছিলো না। কিন্তু রক্তে যে মিশে আছে ফুটবল। মাত্র আট বছর বয়সে নজরে আসেন স্কাউটদের। ১৬ বছর পূর্ণ হবার ১০দিন আগে অভিষেক আর্জেন্টিনার পেশাদার ফুটবলে।
আর্জেন্টিনা জুনিয়রসের হয়ে ৫ বছরে ১১৫ গোল করেছেন। পুরো দেশ তখন মারাদোনাকে লুফে নিতে চায়। কিন্তু মারদোনার পছন্দ নিজ শহরের ক্লাব বোকা জুনিয়র্স। ৪ মিলিয়ন ডলারে পাড়ি জমালেন নতুন ক্লাবে। প্রথম শিরোপার স্বাদটাও সেই মৌসুমেই।
এরপরই এলো ৮২ বিশ্বকাপ। স্পেন গিয়ে খুব বেশি ঝলক দেখাতে না পারলেও দেশটির প্রেমে পড়ে গেলেন মারাদোনা। উড়াল দিলেন বার্সেলোনায়। জেতালেন কোপা দেল রে, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এল ক্ল্যাসিকো।
মারাদোনার গন্তব্য ইতালি। বার্সেলোনার পর আরো একবার রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে পাড়ি জমালেন নাপোলিতে। ৭৫ হাজার দর্শক বরণ করে নিলো রাজপুত্রকে। দুহাত ভরে যেমন মারাদোনাকে দিয়েছে নাপোলি, ঠিক তেমনি নাপোলিকে ফিরিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেননি মারাদোনা। ৮৭তে প্রথমবার সিরি আ শিরোপা জিতলো নাপোলি, মারাদোনার হাত ধরেই। সাত বছরের যাত্রায় সাফল্যের সঙ্গে সমালোচনাও কম জোটেনি।
এরপর সেভিয়া, নিওওয়েলস ওল্ড বয়েজ হয়ে বোকাতেই ৯৭-এ থেমেছে ফুটবলার মারাদোনার ক্যারিয়ার।
২০০৮-এ সবচেয়ে বড় অধ্যায়ের শুরু আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়ে। কিন্তু সেখানেও সমালোচনার জন্ম। ২০১০ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়ে ইতি টানেন আলবিসেলেস্তে অধ্যায়ের।
এরপর আরব আমিরাত, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনায় ঘুরে বেড়িয়েছেন কিন্তু থিতু হতে পারেননি। জিমনেসিয়া লা প্লাতার দায়িত্বে থেকেই বিদায় বললেন।
বড্ড অসময়ে এই বিদায়। সব হিসাব যে এখনো শেষই হয়নি। পেলে না তিনি... কে সেরা? যদিও ফিফা আর দর্শক পছন্দে বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনা।