আমি কেন, যে কেউই ডকুর প্রথম দৃশ্যেই এর ভেতরে তলিয়ে যাবে ভালবাসা আর আবেগের সাথে। দর্শক দেখবে, নাতি-নাতনির সাথে প্রধানমন্ত্রী, রান্না ঘরটার দৃশ্য। যেহেতু ডকু আসলে প্যানেলে তৈরী হয়, ফলে সেখানে শেষটা কেটে শুরুতে বসানোর মতন কাজ করা যায়। আর এখানে এডিটর বা পরিচালকের কাজটা বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। এটা মনে হয়েছে আমার। সাধারন মানুষ দেখছে প্রধানমন্ত্রী, তার মা কিংবা স্ত্রী কিংবা বোন কিংবা বাসার আর বাঙলার আর দশটা নারীর মত মুরগরির মাংস, দই দিয়ে বিরিয়ানির জন্য মাখাচ্ছে। শুরুর জন্য এতো স্মুথ সিন আর হতে পারে না। তাই না, রান্না করছেন, বাচ্চাগুলোর খেয়াল রাখছেন এবং একই সাথে ডকুর কাজও চলছে। দারুন শুরু।
পুরো আশি মিনিটই লাইট ছিল না কোথাও। কিংবা লাইটের ব্যবহার কেন হয়নি আমি জানিনা। হয়তো পুরো গল্পটা শুনে ডিওপি বলেছেন এটাই হবে ভাল। কিন্তু ঘটনাটা যেহেতু একটা ডার্ক মিনিং ক্যারি করে ফলে লাইটের কিছুটা দরকার ছিল। সিম্বলিক হলেও দরকার ছিল। অতীত থেকে বর্তমানে এসে, অনেক সময় দিনের আলোকেও অস্পষ্ট লেগেছে। অনেকটা সময় দুবোন কথা বলেছেন, সম্ভবত বেতের সোফায় বসে। এমনকি পরিবারসহ সকলে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। হয়তো সন্ধ্যা-বিকালে বেশি কাজ হয়েছে। জানিনা, অবশ্যই কোন থট নিয়েই পরিচালক কাজ করেছেন। যেহেতু দিন শেষে এখানে পিএম নিজে আছেন, সেখান বার বার চার বাসায় সিকিউরিটি পার করে, প্রোডাকশন ক্রর কাজ করতে পারাটা বেশ কষ্টেরও বটে। জানিনা, হয়তো ইচ্ছা করেই করা হয়েছে।
বোনদের কথায় চার নেতাকে কম পেয়েছি। তাদের বাবা খুন হবার পর সবকিছুই এসেছে, প্রায়। কিন্তু ঐ চারজন কেন বঙ্গবন্ধু কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন নাকি জাননি, কিংবা পরিস্থিতির স্বীকার হলেন, কে বা কারা কিভাবে দুরুত্ব সৃষ্টি করলেন, সেটা আশা দরকার ছিল। আর একই সাথে মোশতাককে আরো একটু তুলে ধরা উচিত ছিল। যেমন মোশতাক সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য যেটি শেখ হাসিনা করেছেন, সেটির মতন আরো কিছু কথা যে, ‘মোশতাক সুযোগ পেলেই আমাকে ছুরি মারবে’। কারন, এমন ডকু ড্রামা প্রতিবছর করবার মতন সুযোগ নেই ফলে ঘটনাগুলো আসা উচিত ছিল। এনিয়ে অনেক গুলো স্কুল ওফ থটের সম্পাত্তি আশা করেছিলাম। ডকুর সময় একটা ইস্যু বটে। সেখান কতগুলান অ্যাম্বিয়ানকে আবহ তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো কিছু কমিয়ে আরো কিছুটা তথ্য-ঘটনা যা লেজেগুবেরে পাকাবার জন্য অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছেন, সেগুলোর পরিস্কার করা দরকার ছিল। যেমন বঙ্গবন্ধু কেন ইসলামাবাদ থেকে লন্ডন গেলেন? দুজন ভারতীয় ও দুজন পশ্চিমা লেখকের বই বলছে দিল্লীতে হয়তো গেলে সেখানে প্রাণ কেরে নেবার একটা চেষ্টা করা হতো বঙ্গবন্ধুর। কিন্তু আমি নিজে সরকারের কয়েকজনকে প্রশ্নটা করেছি, তাদের ভিন্ন উত্তর ছিল।
জাতির পিতা ও তার বেচে থাকা দুই মেয়েকে নিয়ে এমন ডকু-ড্রামা আগে কেউ করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবে, আওয়ামীলীগের আর্কাইভে সত্যি একটা দারুন সংযোজন। প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়া, তার সাথে কাজ করা, তাকে ক্যামেরা বোঝানো, যেহেতু কর্মিশয়াল ছবি নয়, ফলে এটি কঠিন প্রোডাকশন ছিল। সেটি পিপলু খান দারুনভাবেই করেছেন। তার ক্লাস করবার সৌভাগ্য হয়েছিল অনেক আগে। তাকে তখন এতো বড় মনে হয়নি।
বাংলাদেশ এই ডকু-ড্রামা দিয়ে রাজনৈতিক মুভির জগতে আনু্ষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করলো। ভারত-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আগেই করেছে বাংলাদেশ করলো এই বছর। এটি আরো আগে হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। যাই হোক, তবে এজন্য এখানে আরো ঘটনা আসা উচিত ছিল।
নির্বাচনের আগে এমন একটি প্রোডাকশন অবশ্যই দুইবোনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাকে বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু এটির কারনে ভোট বারাবার খুব সু্যোগ আছে বলে মনে হয় না। কারন এখানে দুই বোনের প্রতিদিনের স্ট্রাগলটাকে দেখানো হয়েছে। এখন তারা প্রতিষ্ঠিত। তাদের কষ্টের দিন শেষে আলো ফুটেছে। যারা দর্শক তারা বেশিরভাগই ৪০র বেশি। ফলে এরা হয়তো নিয়মিতভাবেই আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর প্রতি দুই বোনের যে অসম্ভব টান সেটি ভাল লেগেছে। কারন, এমন একজন মানুষের স্ত্রীরা মাঝে সাঝে হারিয়ে যায়। কারন আকাশ সমান এই মানুষগুলোর বর্নাঢ্য জীবনের প্রতিটি গল্পে হয়তো একটি আকটু থাকেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভালবাসাট একবাবের প্রেমিক পর্যায়ের ছিল মনে হয়েছে। তাকে কথন ১৫, কখন মাঝ বয়সি প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরটা দারুন। এত ডেপথ আছে। বলার মতন না। গানটা পাগল করে দেবার মতন। এত দরদ কতটা ভেতর থেকে গাইলে আসতে পারে, তা আচ করাও কঠিন।
অনেক লেখায় পড়েছি, দেশি-বিদেশি, প্রতিবেশি-দূরদেশী অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে সচেতন করেছিলেন, হত্যার বিষয়ে। কেন উনি বিশ্বাস করেননি যারা সময় রক্ষীবাহিনীর কর্ত্যাব্যক্তি ছিলেন, তাদের ভূমিকা, যারা অন্যান্য দলের নেতা ছিলেন তাদের ভূমিকা, আনন্দ মিছিল, এগুলো আসার দরকার ছিল। সেজন্য যদি দুই বোনের পরে আরো দু’একজন চরিত্র আসতো খারাপ হতো না। দুই বোনের চার ছেলে-মেয়েদের কথা আসতে পারতো। তারা হয়তো একটি করেই লাইনই বলতেন, তাতে আরো অনেক তথ্য আসতে পারতো। তাদের আবেগ, প্রাপ্তি, স্ট্র্যাগেলগুলো উঠে আসা দরকার ছিল। কারন, এমন প্রোডাকশন চাইলেই হবে না।
হয়তো এডিট প্যানেলে আমি যা যা বললাম তার সবই ছিল কিংবা কিছুটা কিংবা কিছুই নয়। দিন শেষে ছোট গল্পের মতন শেষ করে দেওয়াটা ছিল শুরু মতন চমক।